Categorisation Narrows the Glory of Creation. A composition of prose miscellany. প্রকাশক : প্রতীতি। প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৩।

Thursday, January 31, 2008

বৃত্ত ও বৃত্তাবদ্ধতা বিষয়ক একটি আক্রোশের সরল অনুবাদ

চুন বেশি হয়ে যাওয়া বড়ো পানটি মুখে পুরে ধীরে ধীরে সড়ক পেরিয়ে অ্যাকেশিয়া গাছটার গোড়ায় দাঁড়িয়ে গমনপথের দিকে মুখ রাখলে বাঁহাত যেদিকে থাকে, তাকাবার প্রয়োজনে সে অনুভব করে যে মেপে দেখা দরকার কত দূরত্বে ভাবনা রেখে এল, তারপর অর্ধেক পথ ভাবতে-ভাবতে এগিয়ে, বাড়িটা পর্যন্ত আসতে দু'ভাগে সাত-আটটা তরতাজা যুবক দেখে সে, তখন গেটের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছিল মাসুদ, এইমাত্র ওর পালা শুরু হয়েছে, জামাল উদ্দিন, যে আগের পালার, ওর ডিউটিকালেই বাইরে বেরোয় সে, ডানদিকের পুরানো বাড়ি দু'টোর সামনে দিয়ে, যেখানের ঠিক উলটোয় পুরানো রহস্য লুকানো, তার অন্তে আধমতো অন্ধকারে দু'টো বয়েসী যুবক ড্রেনের পুলে পা ঝুলিয়ে বসা ছিল, সোজা মুখে, খুব স্বচ্ছন্দে বাঁদিকে হাঁটা ধরল সে আলো-সন্ধানে, পথে সজনে গাছের অন্ধকারে দু'টো বালিকার গা ঘেঁষা খায় সে, পাশে সবাই টিভিতে মগ্ন প্যাকেজ নাটকে, জানালার পর্দা কাঁপিয়ে বাজে সব চিৎকার এসে কানে বিঁধছিল তার, শেষে ড্রেনটি ডিঙানোর পরেও পাঁচটি কিশোরীকে ডিঙাতে হয়, তখন কালো ঘনপিচ-রহস্য ঘেঁষা অন্ধকারের ঝাঁঝমাখা আলো ভ্রূ-ঝাপসা চোখেও বেশ আন্দাজ করা যাচ্ছিল, ডানপাশে রোল করা প্যাডের মতো অজস্র রাস্তার একটির কোনায় আট-নটি বখে যাওয়া পোলা ঢেঙা করছে, অথচ তার আগেই সে রহস্যে সেঁধেছে, কিশোরীদের পরেই, সজনে গাছের গোড়া থেকেই যার প্রস্তুতি শুরু, এবার ঠিক রাস্তার বিপরীতে, প্যাডের বিপরীতে, সে খুব করে কুতিয়ে কুতিয়ে মুতে নেয়, হাত দুই উঁচু নির্মাণাধীন বিল্ডিং-এর পাশের অন্ধকারে, যেখানের ঠিক পিছেই বখাটে যুবারা, তার মনে হলো, ফাঁদ পেতে আছে লোকটা, হিসুকালে যে ডানপাশের নির্মাণাধীন ভবনের দু'হাতে বসা ছিল শাদা-জামা-পরা, শাদাকে কেননা অন্ধকারেও চেনা যায় ঠিকঠাক, সে সবটা ডুবছিল ততক্ষণে, এদিকে ইনডোরের আলো ফুরিয়ে যায়, ওদিকে ময়লা অন্ধকার, ডুবতে হবে তার ভেতরেই, এবং সঙ্কোচও লাগছিল কিছু ছেলেটাকে, বস্তির ওপাশ থেকেই যে হাঁটতে লেগেছে, তাঁকে ডিঙিয়ে যেতে মনে হয় যে, রহস্যের গন্ধটা সে টের পেয়ে যাবে, তবু পেরোল সে, বাতাসে খোলামেলা শুয়ে থাকা মহিলা ও শিশুদের একটিকে প্রায় মাড়িয়ে

আজ কোনো কাজ ছিল না শুধু আলসেমি ছাড়া, যদি-বা আলসেমিকে কোনো কাজ ভাবা যায়, অবশ্য বেরোবার আগে সে একপ্রস্থ চাষ সেরেছে নাছোড় দিনপঞ্জির পাতায়, কেননা এর হাত থেকে তার কোনো রক্ষা নেই ইহকালে, যা সে ইতোমধ্যেই খুব করে বুঝে গেছে, যাহোক, ভ্রমণের ত্রিভুজে পা দেবার কিছু পরেই সে বাহ্য রহস্যে সেঁধিয়ে ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় ডানপাশের পথে, মন টানে যেদিকে রঙিনবাতির দপদপ, তার ঠিক আগেই বোধ হচ্ছিল যে সে ভুল করেছে, ঠিক তৃতীয় ভুজের পেছনে বর্ধিত রেখা বরাবর না গিয়ে, যেদিকে কাঁচাবাজার দাঁড়িয়ে সবজির তাজাঘ্রাণ গায়ে মেখে, ওদিকে না-হাঁটা পথ, অচেনা-গুরুত্ব আছে, তাই তার মেজাজ স্থাপিত ডানে, কেননা পেছনে ফেরা তাকে দিয়ে হবে না, ওইসব ভণ্ডামি করে কোনো লাভ নেই, বরং এই ভালো, সামনে যা কিছু, সামনের ডানদিকে লাল-লাল নীল-নীল পাঁচতলা, হলুদ গ্রাউন্ডে ঝকমকিয়ে উঠছে এবং রঙের রূপকথা ঝুলিয়ে রেখেছে গোটা দেহে, ভারি সুন্দর করে রাহস্যিক আঁচড়ের মাঝখানে ‘কেয়ার হলুদবরণ’ শীর্ষক ত্রিভুজটি সাঁটিয়ে দিয়েছে কাপড়ের গেটে, নিচে, কিছুটা ভেতরে মুখরা দু'টো শাদা গাড়িকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে এখানে, কেননা ‘হলুদবরণ’ মানে দু'টো বিপরীতধর্মী যৌনাঙ্গধারীর মধ্যে একজীবন ধরে সাধনযোগ্য একখানি বয়স্ক দলিলের মহড়া, কিন্তু এই যে এতক্ষণে মনে হচ্ছে ‘কেয়া’ মানে একজন স্বপ্নভারাক্রান্তা এবং এইমাত্র তাকে হলুদ মাখানো বালিকা না ভেবে ‘কেয়াফুল’ ভাবলে আরো বেশি স্বপ্নময় ও টসটসে লাগে, সে ভেবে দেখে, যদিও এ স্বীকারোক্তি জীবে-জড়ে কিংবা প্রাণীতে-উদ্ভিদে কোনো সংঘাতকে বড়ো বা ছোট করে তোলে না বস্তুত, শেষে চতুর্ভুজের এ কোণেই সে সিদ্ধান্ত নেয়, শব্দের এসব বিবিধার্থ সংগ্রহের মানে-টানে নিয়ে বন্ধুদের সাথে পত্রালাপে যেতে হবে, কেননা তার চোখ মাঝে-সাঝেই বাইরে না দেখে ভেতর দেখায় অতিমাত্রায় নিবিষ্ট হয়ে যায়, এ তার যুগ-জনমের অভ্যেস, এ থেকেও তার একজীবনে রেহাই নেই, এখনো তাই হচ্ছিল, কেননা সে ততক্ষণে বহিরাচ্ছন্নতা থেকে অন্তরোন্মাদনার খোঁচায় জেগে উঠেছে, আর অমনি বলা নেই কওয়া নেই প্যাডের বাঁদিকের একটা রোলপথে সবুজ রঙের জিপগাড়ি ঢুকে পড়ে হাম্বি-তাম্বি করে, এর নিচে চাপা পড়ে মরতে-মরতে যখন জীবনের একটি সুতো ধরে সে ঝুলে পড়তে পারে, ঠিক তখনই চোখ গিয়ে পড়ে সামনের খাদে, তাতে মনে হয় গাড়ির ভীতির চেয়ে এই ভীতি আরো বেশি প্রবল, কেননা ফুটপাতে যদি ম্যানহোল খোলা থাকে, তবে এটা নিশ্চিত যে তা মানুষ মারবার জন্যেই, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের এ নতুন কর্মসূচিটি কবে থেকে যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় হাতে নিয়েছে এবং নগর কর্তৃপক্ষকে কবে-কবে-যে তার বাস্তবায়নের দায়িত্বটাও অর্পণ করে রেখেছে, তা তার জানশোনার আওতার মধ্যেই নেই, তবে এ মুহূর্তে সে এটাই দেখতে পাচ্ছে যে, ঢাকনাহীন ম্যানহোলগুলো একটা করে আস্ত মানুষ গিলে ফেলবার জন্যে রীতিমতো ওঁৎ পেতে আছে, আর গাড়িটা মারতে লেগেছিল নিছক দুর্ঘটনাবশত, এটা এজন্যে বলা যে, ফুটপাত মানে পায়ে চলার পথ এবং শহরের পায়ের পথে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী খুব একটা হাঁটে না বস্তুত, মাঝে-মধ্যে এক দু’টা খেপা কুকুর এ-বাড়ি ছেড়ে ও-বাড়ি, এবং নানা রঙের শখের বিড়ালকে দেখা যায় দিনে-রাতে দু'বেলায়ই, এবং ইঁদুর যায় তার মতো করে থেমে থেমে, নাক ঘষে ঘষে, কখনো বা নিচের স্যুয়ারেজ পথ দিয়ে, উলটো পায়ে, অ্যাডভেঞ্চার বিষয়ক আলাপ, যেটা দীর্ঘপথ রিক্সা খুঁজে-খুঁজে হাঁটার সময় এক অফিসবন্ধুর সাথে প্রথমবার মৃত্যুর তিনঘণ্টা ও পাস্তুরিত দুধের দু’ঘণ্টা পর হয়েছিল যে, বর্ষাকালে যখন রাজপথ-সাঁতরানো ঢল ও মানবকুলের গৃহে ব্যবহৃত পানি গিয়ে পড়ে পাইপে, তখন ইঁদুরের নিশ্চিত মৃত্যুর আশঙ্কাকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না, একথা ইঁদুরটা দেখামাত্র তার মনে পড়ে, আর অমনি অভিমান খুবলে ওঠে নগরপালের প্রতি, যে এমন করে খুলে রেখেছে ম্যানহোলের হিংস্র হা হয়ে থাকা মুখ, তার বাপের কবর

সে এখন কী একটা ধোঁয়ার মতো নিরাবয়ব শক্তির দ্বারা তাড়িত বলে, সযত্নে রক্ষিত জরুরি সঞ্চয়টুকুকেও মন খুলে ছুড়ে দেয় দূরে, এবং আবারো বাঁয়ে চেয়ে পা সোপর্দ করে পঞ্চভুজে, যেটা বাড়ি নং-৩, রোড নং-৩, ব্লক নং-এ, সেকশন নং-৬, ঠিক তার সামনে গিয়ে মনে হয়, একটু এগোলেই চেনা পথ, আর অমনি মনটা খারাপ হয়ে যায়, তবু গা না করে হেঁটে-হেঁটে বহুগামী বিদীর্ণ ষড়ভুজে পড়ে এবং পায়ে শিকল অনুভব করে সে, তার মনে হতে থাকে এরচে’ বরং থেমে থাকা ভালো, যেই ভাবা সেই কাজ, পা জাপটে ধরল জড়তা নামক মন্দীভবন ক্রিয়া, ফুটপাত থেকে ডানে ধনুকের মতো বেঁকে গেল শরীর, অল্পক্ষণ পর ফের গতিপ্রাপ্ত হলে ঘাসায়িত জায়গাটা দিয়ে সে পা ডুবিয়ে হেঁটে যেতে-যেতে রাহস্যিক দৃষ্টিতে ওকে নিরীক্ষণ করে, তার পশ্চাৎ থেকে অগ্রে গমন করে একটি ছেলে, কোথাও না-থেমে ছেলেটির পশ্চাতে সে সোজা পেরিয়ে যায় দ্বিখণ্ডিত মহাসড়ক, পিচ ও ঘাসের সঙ্গমস্থলে দাঁড়িয়ে সে ভাবতে থাকে কিছু একটা, ততক্ষণে বিভিন্ন চরিত্রের প্রাণীদের ততধিক বিচিত্র বাহন তার বাঁদিক দিয়ে ছুটে যায়, এমনকি একটি শূন্য রিক্সাও যায় যাত্রী প্রত্যাশায়, তখন তার মনে হয় রিক্সায় চড়লে ভালো হয়, কিন্তু চোখ থেমে আছে অন্যপারে, একেবারে সোজা ঢুকে যাওয়া পথটিতে, ঝট করেই পিচের উপর দিয়ে তরতর করে মাঝখানে চলে যায় ডানদিকে চেয়ে এবং একটুও না-থেমে বাঁদিকে ওপারের অংশে, তথা সপ্তভুজের দূরত্বে, কিন্তু ভাবনা হেরে যায় এবং হেরে যায় পা-ও তাৎক্ষণিকতার কাছে, কেননা একটু পরে দেখা গেল, পড়শির অন্দরে না-ঢুকে, ভুজ ভেঙে সে ওপারের ফুটপাত ধরে অষ্টভুজে সমর্পণ করল নিজেকে, এদিকে বারবার আসা হয়, অথচ এটুকু ফুটপাত তার কখনো মাড়ানো হয় নি, কিন্তু যাত্রা করেই সে দেখল, সামনের নিচেটায়, ঘাসের উপরে ফেলে রাখা ভাঙা গাড়ির বডিতে, আরো দু'টো বালকসহ তাকে অতিক্রম করে আসা কালো-গেঞ্জি-পরা বালকটি বসে তার দিকে সন্ধিগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে, এবং ওদের কাছাকাছি চলে যেতেই, কালো-গেঞ্জি তার সামনে-সামনে হাঁটতে লাগল, ডানে তখন ডেন্টাল ক্লিনিক, যার বাউন্ডারি জুড়ে বড়ো বড়ো দু'টো মাঢ়ি আঁকা, যে দু'টোর একটিরও বত্রিশটি দাঁত নেই, খুব বেশি হলে পনেরটি হবে তার মনে হলো, এই ছেলেটিকে এক থাপ্পড় দিয়ে, যদি এরকম পনেরটি রেখে বাকি দাঁতগুলো ফেলে দেয়া যায়, তবে সঠিক তথ্যটি হয়ত পাওয়া যাবে যে, ওর এর আগেও কখনো কোনো দাঁতের ডাক্তারের প্রয়োজন হয়েছিল কি না, কিন্তু এ পরীক্ষা অপ্রয়োজনীয় ঠেকে তার কাছে, যখন ওই ছেলের অজস্র প্রতিমূর্তি বিভিন্ন দিক থেকে তার দৃষ্টিসমক্ষে আবির্ভূত হতে থাকল, এটা ভয়ের কারণ নয় তার মনে হলো, কেননা সে নির্ভেজাল পথিক, অপরাধে জড়িত না-থাকলে ভয়তাড়িত হওয়া বোকামি, এরকম বোকামি সে অনেক করেছে জীবনে, কিন্তু আর নয়, ভেবেই ঝট্ করে বুকটাকে ইঞ্চিখানেক উঁচু বানিয়ে তুলল সে এবং একটি বুলডোজারের গা ঘেঁষে, বালু সাঁতরিয়ে অষ্টভুজটা অতিক্রম করতে থাকল, আর তখনি ডানপাশের একটা সাইনবোর্ডের সাথে তার দৃষ্টির হলো মুখোমুখি সংঘর্ষ, এ আকস্মিকতায় কতজন হতাহত ভেতরে, সে হিসেবটা করা খুব জরুরি ঠেকতেই মনে হলো, রুমে ফেরাটাই অপেক্ষাকৃত বেশি জরুরি, কেননা পথে হাঁটতে-হাঁটতে এত বড়ো অঙ্ক কষা যায় না, যেহেতু মানুষ কম্পিউটার আবিষ্কার করলেও সে নিজে মোটেই কম্পিউটার নয়, অবশ্য এটা অস্বীকার করার কোনো জো নেই যে, সাইনবোর্ডটির মর্মার্থের ভেতরে মুখ-লুকিয়ে-রাখা-জন তার দীর্ঘ সময়ের বন্ধু ছিল, এমনকি চিঠিপত্রে তা এখনো সত্য বটে, তবে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ এই ত্রিকাল জুড়েই এটা সত্য যে, ও তার সবচে’ বড় মানুষ-শত্রু, কাজেই হাজার রকম মানবীয় ভীতিবোধের মধ্য থেকে চলনক্ষম কয়েকটি ভীতিবোধ তার শরীরে সঞ্চারিত হলো, কেননা কেউ এমন জাতসাপ সঙ্গে নিয়ে শোয়-না বস্তুত, শত্রু পড়শি হলে তার সাথে একজাতের সৌহার্দ্য গড়ে ওঠে বটে, এজন্যেই হবে, একটু থেমে মুখে আঙুল পুরে সে-তার নিজের দাঁতগুলো গণনা করতে লাগে, এবং মাত্র বাইশটি পেয়ে, রাগে এমন অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে যে, সে সিদ্ধান্ত নেয় মুখে কিংবা চিঠিতে তার প্রতিবেশ সম্পর্কে, ওকে অথবা ওর প্রতিমূর্তিকে কখনো জানাতে হবে এহেন ক্ষরণের কথা, পা তখন জড়তা ভাঙে এবং অষ্টভুজের শেষ মাথায় পাকুড় গাছের নিচে, সিগারেট কিংবা কলা কিংবা কনডম কিংবা অন্যকিছু কিনতে দাঁড়ায় এবং পানের ভেতরে চুন বেশি দেয়ার জন্যে দোকানদারকে কষে একটা গাল ঝাড়ে, ব্যাটা থতমত খেয়ে আরেকটি পান হাতে ধরিয়ে দিতেই সে নবম ভুজে নামে, অবশ্য এটিকে নবম ভুজ না বলে প্রথম ভুজের পশ্চাৎপ্রসারণ বলা অধিক যৌক্তিক, কেননা যে বিন্দু থেকে সে যাত্রা শুরু করেছিল এবং এখন সে যে অবস্থানে আছে, তা একই রেখায় অবস্থিত

মাসুদের পালা শেষে যখন জামালের পালা শুরু, তখন তার ছাদে যেতে ইচ্ছে হলে ওপরে তদন্ত পাঠায় এটা দেখতে যে, ছাদের দরজাটি খোলা কি না, কিন্তু দোতলায় যেতেই কেউ একজন তথ্যদূতকে ফিরিয়ে দেয় এই বলে যে, সে যেন জানায় তা বন্ধ, কিন্তু নিচে দাঁড়িয়ে ওই কথোপকথন শুনে, বিবিধানুষঙ্গের সহযোগিতায় সে বুঝতে পারে যে, প্রকৃতপক্ষে দরজাটি খোলা, ইচ্ছে করলেই সে সেখানে যেতে পারে, তবে একজন মানুষ তার অধীনস্তকে মিথ্যা বলার জন্যে কেন নির্দেশ দেয় এবং অধীনস্তই বা কেন এসে উলটো সত্যটাই বলে, এটা না বোঝে সে কিছুতেই পা বাড়াতে পারে না ওপরের দিকে, ততক্ষণে শুরু হয়ে যায় মানসাঙ্কের বিভিন্ন আঙ্গিক পাঠ, দরকষাকষি এবং একপর্যায়ে জটিল ক্যালকুলাস, এরকম গণিতাচ্ছন্নতায় রাত যখন শেষপাদে, যখন পুনর্বার নিজের পালায় যোগ দেবার জন্যে মাসুদ প্রাতঃকর্ম সারছে, তখন মিলে যায় সব জটিল অঙ্কের ফল, আর এ ফলের সাঙ্কেতিক রেখাকে অনুবাদ করে যা পাওয়া যায়, তা হলো এই যে, কেবল তার শত্রুর নয়, নিজের আস্তানাসহ, গোটা অষ্টভুজ ক্ষেত্রটাকেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটা বোমার আঘাতে তুলোপেঁজা করে দিগ্বিদিকে উড়িয়ে দিতে হবে

No comments: