Categorisation Narrows the Glory of Creation. A composition of prose miscellany. প্রকাশক : প্রতীতি। প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৩।

Friday, February 1, 2008

শৃঙ্খলিত জৈববৃত্তির ব্যাপারটা বেদনাউদ্রেকী

লাল গ্রাউন্ডের উপর সাদা কালিতে লেখা ‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী’র সাইনবোর্ডের একেবারে নাক বরাবর, মানে নাকের ছিদ্র দু'টো ঢেকে রাখা পুরানো পাঁচটি মালবাহী বগি, যেগুলো যৌনকর্মীদের ব্যায়ামাগার এবং যেগুলোর ধার কাছ দিয়ে গেলে বলবান দুর্গন্ধ সর্দারের হাতের টনী ঘুষিতে ছিটকে দূরে সরে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়তে হয়, তার সামনেকার সরু প্ল্যাটফর্ম, যেটা এখন রেল-কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যবহৃত হয় না এবং যেটা একই সঙ্গে উন্মুক্ত গণশৌচাগার, ঠিক সেখানটায়ই এক বিকেলে দেখা হয়েছিল, ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দু’পা ফাঁক করে শুয়ে থাকা অবস্থায় আরেকজন স্টেশনবালাসহ, ঠোঁটের লাল টকটকে আগুন-রঙা লিপস্টিক, কপালের নীল টিপ, সাদা গ্রাউন্ডের উপর লাল ও বেগুনি প্রিন্টের জামা, লাল সালোয়ার ইত্যাদি ওর গায়ের কালো গ্রাউন্ডে অদ্ভুতদৃশ্য এক বর্ণবিভা ফোটাচ্ছিল, সূর্যের তখনকার ডিমের কুসুম-রঙা আলোর প্রেক্ষাপটে, আর ওই ঘাসের সবুজের

সে যাচ্ছিল ইসরাইলের সেলুনে, স্টেশনের মূল গেটের ডানপাশে, যেদিকে জোর করে খাইয়ে-দিতে-চায়-ধরনের অসহ বণিকদের পাঁচটি খাদ্যাগার, আর তার একটু সামনে বেকার কিশোরদের কেরামবোর্ডের আখড়ার পাশে রবীন্দ্রনাথের লম্বা দাড়ি-গোঁফওয়ালা বাঁধাই ছবিটার নিচের চেয়ারটায় বসে মুখের ভেতরে ঢুকে যাওয়া গোঁফগুলো ছেঁটে ফেলতে, যেগুলোর জন্যে প্রায়ই তার ভর্ৎসনা শুনতে হয় বিভিন্ন বয়েসী নারী-পুরুষের কাছ থেকে, অবশ্য নারীদের থেকেই বেশি, এমনকি প্রেম করবার সময়ও, বেলতলে, চা-খানায়, ঘরে-- তবে মাথার চুলগুলোর ব্যাপারে অত বেশি আপত্তি নেই কারো, যদিও অনেকে দূর থেকে আরেকজনকে দেখিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে, কিন্তু এ বিষয়ক একখানি ওজনদার প্রশংসাও তার কানে ঢোল-সহরৎ করেছিল একদিন, কলেজ সেমিনারে, পরিচয়ের তৃতীয় দিনে, রানু নামের পানখোর গোলাপী মেয়েটির কাছ থেকে, বিকেলে, ক্লাসের ফাঁকে, কিন্তু এজন্যেই নয়, তার নিজেরও কিছু পক্ষপাতিত্ব আছে চুলদাড়ির প্রতি, নইলে দিনের-পর-দিন গিয়ে, পাঁচ বছরের মাথায়ও কাটিকাটি করে ওগুলো এ-যাবৎ কাটা যে হলো না, একথা তারই সবচেয়ে বেশি জানা, নইলে ‘আপনার চুলগুলো ত খুব ফাইন’ শুনেই, পেছনে আটআঙুল লম্বা চুল রাখতে তার বয়েই যেত, যেখানে উঠতি শ্যালিকা ও দুষ্টু কলিগেরা ফাঁক পেলেই, জোর করে ধরে মেয়েদের মতো ফিতা দিয়ে বেণী করে দিতে চায়

যে সন্ধ্যায় কথা হলো, সেদিন, এরা তিন ওরা চার, বসা ছিল নাগরের জন্যে উন্মুখ হয়ে, দক্ষিণের খোলা ঘাসের চাতালে, এমন ঋদ্ধ-সুন্দর চেহারার তিন-তিনটা যুবাপুরুষ দেখে, জিভে-নিভে দু'স্থানেই জল গড়াচ্ছিল ওদের, কিন্তু মুহূর্তমাত্রেই বুঝে ফেলেছিল দীর্ঘ অভিজ্ঞতাবশত যে, এরা আর যাই হোক অন্তত লাগাবার জন্যে আসে নি, মাগনা রসিক, এক-দু’বার হাত-টাত মেরে ফাঁক বুঝে চলে যাবে এক টাকাও না ধরিয়ে দিয়ে, ফলত একে একে সবাই ফুটে যাচ্ছিল স্থানটি ছেড়ে, যার-তার মতো ডান বা বাঁহাতে পাছায় থাপ্পড় দিয়ে, নতুন লাগা ধুলোগুলো ঝেড়ে ফেলে, কেবল একজন, যে বয়সে নবীন, রয়ে গেল, আগ্রহে গদগদ হেসে-খেলে, আর জিভে ও ঠোঁটে দরকার মতো রস ঝেড়ে ফোটাতে থাকল ভুরি ভুরি পিরীতের খই, এমনকি শেষে বুকে ও নিতম্বে হাত মেরে, কাড়াকাড়ি করে যেটুকু উষ্ণতা সম্ভব, নিয়ে, ঘণ্টাখানেক বাদে, ওর ইচ্ছাতেই বিনেপয়সায় চলে আসতে পেরেছিল এরা, সেই থেকে শুরু, যেখানে যেভাবে দেখেছে, দশজন-পাঁচজন নেই সবার সামনেই পাথর কয়লার মতো মুখে যথাসম্ভব হাস্যগুণ ফুটিয়ে ‘কেমোন আছেন’ শব্দে ঢেলেছে পরিচয়-রস, এমন তো নয় যে তার সবসময়ই এসব ভাবনা সঙ্গী, একদিন ইচ্ছে-টিচ্ছে করে তো ছয়দিন এসবকে বাজে মনে হয়, তাছাড়া এক-আধদিন তার সঙ্গে এমনও কেউ থাকেন, যার সামনে এরূপ অযাচিত কুশলাদি বিনিময় পর্বের অভিনয় রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ, এমনকি সঙ্গীজন ব্যাপারটাকে অন্যরকম ছন্দে অনুবাদ-টনুবাদ করে নিয়ে ভুল বুঝে বসতেও পারেন, কাজেই এ নৈমিত্তিক আছরটা স্টেশনে তার জন্যে আতঙ্ক হয়ে বিরাজ করছিল, তবু তার দিনানুদিনের ওভারব্রিজ-আরোহণে ব্যত্যয় ঘটেছে এমন নয়, কেবল স্টেশনে অমন কারোর সঙ্গে হাঁটাটা তাকে বাদ দিতে হয়েছে, যার সাথে সে অতটা ফ্রি নয়, এবং ওকে, মানে ময়নাকে এড়িয়ে চলার জন্যে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হয়েছে, কেবল যখন আপাত নির্জন ও নিরাপদ স্থানে সে থাকে, তখন চলন্তাবস্থায় ওর খবরাখবরটা নিয়ে নেয়া ছাড়া আর কোনো আগাছার মতো যৌনবোধে তাড়িত হয়ে ওকে ঘিরে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না, যেখানে তার আসল যে কাজ, মানুষ দেখা, মানুষকে জানা, এটা সর্বদা ক্রিয়াশীল না রাখতে পারলে, এসব বাজে আচ্ছন্নতায় কোনো কাজে দেবে না, একথা, অন্তত বয়সের এ পরিণতিতে পৌঁছে, সে নিজে-নিজেই উপলব্ধি করতে বিশেষভাবে সক্ষম

একবার হলো কী, দু'নম্বর প্লাটফর্মে যখন বিনেপয়সার অপেক্ষমাণ যাত্রী ও উদ্বাস্তুদের চোখে কানা থালার মতো ভোর ভাঙছিল ফাল্গুন মাসে, তখন একজন উদ্বাস্তু পুরুষ আদি-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পাশেই শুয়ে থাকা একজন আলুথালু-বস্ত্রাকে চোখ বুঁজে গোটা শরীর দিয়ে চেপে ধরে, ততক্ষণে-যে জগৎটা রীতিমতো ফর্সা হয়ে গেছে, এ খবর রাখবার তার কোনো মতি ছিল না, তো দিনের ফর্সা হয়ে যাওয়া অথবা অনভ্যাস, যে কারণেই হোক, এক ঝটকায় উঠে বসে মহিলাটি প্রাকৃত বাংলায় পুরুষটিকে এমন গালাগাল দিতে থাকল যে চারপাশে বেশ লোক জমে গেল, এরকম পরিবেশে ময়না বা ওর সমগোত্রীয় কারো থাকবার কথা নয়, ওরা স্টেশনের প্রভাবশালী স্থায়ী বাসিন্দা, নিশিযাপনের জন্যে এরচে’ আড়াল ও আরামপ্রদ জায়গাগুলোই ওদের দখলে, কাজেই ময়নার দেখে ফেলবার ভয় নেই মনে করে ঢাকাগামী ভোরের ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে-থাকতে আদি-ঝগড়ার ব্যাকরণ শিখবার কাজে মনোনিবেশ করল সে, কিন্তু হায়, এখানেও ময়না, রেলবগির আড়াল থেকে দিনের প্রথম খেপটি মেরে বেরিয়ে এসেই বীরের মতো একেবারে ঝগড়াস্থলের মধ্যবিন্দুতে হাজির, সে লোকজনের ভিড়ে মুখ লুকিয়ে কোনোভাবে ময়নার চোখ থেকে নিজেকে রক্ষা করে, কামুক লোকটা তখন রীতিমতো নিস্তেজ, মহিলাটি যেভাবে তার মায়ের সাথে বোনের সাথে মুখে-মুখে তাকে শুইয়ে দিচ্ছিল বারবার, তাতে তার উত্তেজনা যে উলটোমুখে ধাবিত হবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ময়না তা হতে দেবে বলে মনে হলো না, বাঁহাত দিয়ে লোকটাকে ধরে তার কাছে দশ টাকা আছে কি না জানতে চেয়ে, নেতিবাচক জবাব পেয়েও, ‘বে-জা’গায় হাত মারো কেন বাবা, আস তোমার গরম কমাইয়া দেই’, বলে, টেনে রেলবগির পেছন দিকটায় ছুটলে ওকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করে তার, সেটা এজন্যে যে, আজ-বসন্তে উদ্বাস্তু লোকটার একজন বিপরীতলিঙ্গীর স্পর্শ সত্যিই দরকার ছিল, টাকা নেই বলে তার সে দরকার অদরকারে পরিণত হয়ে যাবে, এটা ময়না পেশাদার একজন হয়েও মেনে নেয় নি

সাতপ্রস্থ রেললাইন, খানপাঁচেক সচল-অচল মালগাড়ি, নতুন পুরাতন গু-মুত মিশ্রিত জটিল দুর্গন্ধ পেরিয়ে, ডানদিকের কারখানায়, সেদিন দু'জন মিলে তারা ঢুকে গিয়েছিল স্থলচর শামুক কুড়াতে কুড়াতে, আরেকটু বেশি হেঁটে পূর্বদিক থেকে, দু'টো বিধ্বস্ত রেলগাড়ির ফাঁক দিয়ে লম্বা ঘাসে মোড়া বিপজ্জনক পথে, যেদিকে প্রায়ই দেখা মেলে বিষধর সরীসৃপের, জোঁকের উপদ্রব তো আছেই, তদুপরি আছে আর্থ্রোপোডা পর্বের বিভিন্নাকৃতির পোকা, আর ঢুকেই, তোতলা গার্ডটার উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে, পছন্দমতো একটা মোটামুটি পরিচ্ছন্ন কামরায় বসে, এদিক দিয়ে আসার যৌক্তিকতাটা নতুন করে যাচাই করে নিল, অন্তত ভেতর দিকে ঢুকতে দেখেই যারা মনে করে, বাজে মেয়েদের কাছ থেকে মাত্র পাঁচ টাকায় সঙ্গমসুখ কিনতে যাচ্ছে, তাদের কবল থেকে নিষ্কৃতি পাবার এ প্রক্রিয়াটার কোনো বিকল্প আপাতত খুঁজে না পেয়ে, মনে স্বস্তি নিয়ে তারা পুকুরের দিকে তাকাল, যেখানে প্রায় ন্যাংটো হয়ে স্টেশনবালারা স্নান সারে, শাড়িসায়া খুলে-কেচে আগে ভাঙা বগিতে শুকাতে দিয়ে, পরে, দীর্ঘসময় ধরে যত্ন করে নিজের উদোম শরীরের বিশেষ-বিশেষ স্থানে বিশেষ-বিশেষ কৌশলে মাজন পরিচালনা করে, এর সবটাই যে দেহের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে, কস্মিনকালেও ব্যাপারটা এরকম নয়, বরং দিবালোকমণ্ডিত অলস সময় ক্ষেপণের জন্যেও বটে, যাহোক, ওপাশে রেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসমেত জামাতে দাঁড়িয়ে এসব স্নানাচারাশ্রিত কাণ্ড কারখানা বিনা টিকিটে উপভোগ করে অশেষ সওয়াব হাসিল করে আসছে সেই আদ্যিকাল থেকে, বংশানুক্রমে, সে বিরক্ত হয় সহসাই, তোতলা গার্ডটার অনর্থক এটা-ওটা প্রশ্নে, যার এক-দু'টার জবাব ইতোমধ্যে সঙ্গের জন করুণা করেছে, সে চাচ্ছিল মস্তিষ্কের ভাবনাটার কী করে পরিপূর্ণতা দেয়া সম্ভব, কিন্তু লোকটার ক্রমবর্ধমান তোতলামি তাকে অত্যাচারিত করছিল, অবশ্য এরকম ঘটনার সাথে সে বেশ পরিচিত, শুধু সে কেন, প্রায় সবারই কমবেশি এতদবিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে যে, বিরক্তির কথা বলাও যাচ্ছে না, আবার বকবক সহ্যও করা যাচ্ছে না, এসব ক্ষেত্রে সে নীরবতার চাবুকে ওঠায় উদ্দিষ্টজনের পিঠের চামড়া, এক কথার জবাব দিয়ে, আরো পাঁচ কথা বলার সুযোগ করে দেবার মতো বোকামি সাবালক হবার পর থেকে সে আর করছে না, তবে একে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করাও এক ধরনের বোকামির পর্যায়ে পড়ে, কেননা তাদেরকে এখান থেকে বিনাশর্তে তাড়িয়ে দেবার অধিকার গার্ডটি সংরক্ষণ করে, তার এ ক্ষমতাটাকে, এ মুহূর্তে বাহ্য-আচারে হলেও সম্মান প্রদর্শন করে যাওয়ায় কিছুমাত্র আত্মপ্রতারণা থাকলেও নগদ কোনো ক্ষতি নেই, এবং কী কাণ্ড, হঠাৎ বৃষ্টি, আর ঝুতঝুতি পুকুরপাড় থেকে স্নানার্থী স্টেশনবালারা এসে কামরাটাকে মোটামুটি জনাকীর্ণ করে দিল, এটি আরো বিস্ময়ের যে তাদের ভেতর ময়নাও ছিল, সদ্যস্নানা, ঢুকেই, ‘কেমোন আছেন’ এবং ‘এ-জন আমার মা, নিতে আসছেন, আমার বিয়া ঠিক হইছে’, বলে ও থামতেই, ইশারায় কাছে ডেকে ডাইনির মতো চেহারার সেই বুড়ি ময়নাকে শাসাল পরপুরুষের সাথে কথা বলার অপরাধে, বুড়ির ভড়ং দেখে তার প্রথমত রাগ হয়, তবে পরক্ষণে ঘটনাটা তাকে এমনভাবে বিস্মিত করে যে, সে তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, জোরে হাসতে চেয়ে পারে না, বুড়িকে উদ্দেশ্য করে একটা ন্যাংটো কথা বলতে চায়, তা-ও পারে না, শেষে এই ঝাল গায়ে মেখেই ডুব দেয় অন্তর্গত হ্রদে, যে-কেউ যদি ময়নাকে বিয়ে করতেই চায়, তবে ওর খুচরো রেটে দেহ বেচে খাবার কোনো যুক্তিই নেই, বিয়েতে ওর সম্মত হওয়া উচিত, সে এই সিদ্ধান্ত নেয়, ময়নাকে বলে দেবে যে, ও-যেন কালবিলম্ব না করে দুয়েকের ভেতর ওর মায়ের সঙ্গে চলে যায়, কিন্তু ওই মা মহিলাটির এ কী আচরণ, বছরের অধিক কাল থেকে যে মেয়ে স্টেশনে গণহারে দেহদানে প্রবৃত্ত আছে, সে একজন পুরুষের সাথে কথা বললে তার সহ্য হচ্ছে না, এ ঘটনাটাকে ‘চরম ফাজলামো ছাড়া আর কিছু নয়’ বলে মনে হয়, তার খুব জানতে ইচ্ছে করে যে, এতদিন মেয়ের খোঁজখবর করার ভার মহিলাটি কার ওপর ন্যস্ত করে রেখেছিল, কিন্তু বৃষ্টি থামে এবং বুড়িসহ একে-একে সাতজন ধরেই কামরা থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যায়

অন্যদের উপার্জন এ সপ্তাহে যাই হোক ময়নার মোটেই হয় নি, ও স্টেশনে ছিলই না, সম্ভবত ওর মায়ের সাথে বাড়ি চলে গিয়ে থাকবে, এবং এটা সে খুব বুদ্ধিমতির মতো কাজ করেছে, সুযোগ পেলে ময়নাকে বাড়ি চলে যাবার পরামর্শ দেবার সিদ্ধান্ত সে নিয়েওছিল, কিন্তু পরামর্শ ছাড়াই যখন গিয়েছে, তখন ব্যাপারটা ভালোর ওপর ভালো, যারা এখনো স্টেশনে থেকে গেছে, তাদের মস্তবড়ো একজন প্রতিদ্বন্দ্বীও এ সুযোগে কমল, এ অর্থে তাদের খুশি হবারও যথেষ্ট কারণ আছে, তবে স্টেশনে যে একহালি বোবা মেয়ে আছে, দেহ ব্যবসায়ী, ওরা দারুণভাবে খুশি হয়েছে ময়নার চলে যাওয়ায়, নির্বাক বলে ওদের প্রচুর অত্যাচার সইতে হয় সবাকদের থেকে, বিশেষ করে ময়নাটা কী জানি কী জন্যে, ফাঁক পেলেই এদের পিঠে বসিয়ে দিত দপাদপ দু'চার ঘা, আর ওরা বাজখাই গলায় চিৎকার জুড়ত কুকুর ছানার মতো, অন্যকেউ, অপেক্ষমাণ যাত্রী কিংবা পকেটমার এসে ওদেরকে সাময়িকভাবে উদ্ধার করত, এসবের থেকে বেশি আলোচ্য বরং এ সারকথাটি যে, ওদের একটা নৈমিত্তিক ফাঁড়া দিনকয় থেকে আর দেখা দিচ্ছে না, কিন্তু আট নম্বর দিন, নতুন শাড়ি পরা ময়নাকে স্টেশনে দেখে, বোবাহালির মতো আতঙ্কবোধ না জাগলেও সঙ্গত ও সংক্ষিপ্ত একটা প্রশ্ন জাগে তার মনে, এবং যার উত্তর জরুরি ভিত্তিতেই জানা দরকার মনে হয়, এটা জানার আগে তার অন্যসব কামকাজ, যা করবার জন্যে সে যাচ্ছিল, আপাতত স্থগিত ঘোষণা করে সে, তার জরুরি যে কাজ, বন্ধুদের কাছে লেখা চিঠি পাঁচটিতে ডাকটিকিট লাগিয়ে অথবা ফ্রাঙ্কিং করে আরএমএস-এর গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া, তা ঘণ্টাখানেক পরে করলেও মহাভারত অশুদ্ধ হবার সম্ভাবনা নেই, ভেবে, লোকজন না ডরিয়ে সে Mymensingh JN লেখা বিশাল সাদা সাইনবোর্ডের কাছে দাঁড়ানো ময়নার কাছে গিয়ে, ‘ময়না যে’ বলে দাঁড়াতেই, ‘কেমন আছেন’ দিয়ে শুরু করে ও জানাল যে, ওর বিয়ে হয়েছে, কিন্তু কথাটা বিশ্বাস করতে তার কষ্ট হচ্ছিল, কেননা বিয়ে হলে ওর এখানে ফিরে আসার সম্ভাবনাটাকে মন বারবার নাকচ করে দিচ্ছিল, এবং সে ভাবল, আরেকটা প্রশ্ন এখন খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, স্বামী বেচারা ব্যাপারটা বুঝলে তার ক্ষতি-টতি হবে কি না, জানতে চাইলে, ময়না তাকে বিস্ময়ের আঘাতে ভাঙচুর করে দিল এই বলে যে, ওর স্বামীই ওকে এখানে পাঠিয়েছে নয়া সিফনটা পরিয়ে, এবং এখন থেকে ওর আর খোশগল্পে সময় নষ্ট করলে চলবে না, দিনান্তে স্বামীর হাতে ছয় ইঞ্চি দীর্ঘ একটা কমলা-লাল নোট গুঁজে দিতেই হবে

3 comments:

Anonymous said...

Good write-up

Anonymous said...

Kobita valo hoyechhe.

Talha Yeasin said...
This comment has been removed by a blog administrator.