Categorisation Narrows the Glory of Creation. A composition of prose miscellany. প্রকাশক : প্রতীতি। প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৩।

Tuesday, January 29, 2008

চরম ব্যস্ততার ভেতর আরেকটা কাজ বেড়ে যাওয়া ভারি বিব্রতকর

ওরা দু'জন এখন যে স্থানটিতে উপবিষ্ট, সে স্থানটিতে এর, সাতবছরের পুরানো বিব্রতিমিশ্রিত আনন্দের স্মৃতি আছে, স্থানটির সামনে যথাক্রমে বাইশহাত খাড়া ঢাল, দুশ’ গজ গুঁড়ো ঢেউযুক্ত নদী, আড়াইশ’ গজ শাদা কাশচর, সত্তর গজ শীর্ণ নদী, তিনটে সবুজ বাড়ি ও অসীম দিগন্ত-- পেছনে যথাক্রমে সাতহাত খাড়ি, বিশহাত ঘাসপার্ক, ফুটের হিসেবে ৫৪ ক্ষেত্রফলযুক্ত আটচালা বিশ্রামাগার, ৩৬ ক্ষেত্রফলযুক্ত অকেজো কৃত্রিম প্রস্রবণ, সাড়েচারহাত আরবান পথ, আওড়ি কাঁটা ও সরকারি বাংলো-- ওরা দু'জন বালক-বালিকা, ইন্টারমিডিয়েট বয়স, নাম নেই অথবা জানা নেই-- ধরা যাক একজনের নাম গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, আরেকজনের অনন্ত বিকেল, ‘এর’ বলতে যাকে বোঝানো হচ্ছে, সে একজন দায়হীন পর্যবেক্ষক, ভবঘুরে ছেলে, নিয়ত সংক্রমণের ভেতর বেড়ে ওঠা ও বসবাসরত, বয়স পঁচিশ, নেশাখোর বলা যায় তবে নেশাতে আসক্তি নেই, কোনো অবস্থাতেই পাগল বলা সঙ্গত নয়, কিন্তু অনেকে বলে, গ্রামের সরলপ্রাণরা বলে মাস্টরসাব, কেউ কেউ কবি বলে, কেউবা সাংবাদিক

ধরা যাক ভবঘুরের নাম নীরব গোধূলি, তো গোধূলি যখন এল শেষপ্রায় বিড়ি টানতে টানতে, তখন বৃষ্টি ও বিকেল জড়াজড়ি করে আছে, ওদের মাঝে কোনোই দূরত্ব নেই, গাছের গুঁড়িতে বসা, গোধূলি ভাবল, বিকেল কেন থাকছে এখনো, তার অবশ্যই চলে যাওয়া উচিত, শেষ রোদ যখন কাশবনে জাদু দেখিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে, পাখিরা যখন চর ছেড়ে ফিরে আসছে তীরগাছায়, তখন তো বিকেলের থেকে যাওয়াটা কোনোভাবেই টলারেট করা যায় না, প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী বৃষ্টি এখন পুরোটা গোধূলির, যদি রোদ সূর্যের হয়, রঙধনু আকাশের

ঘাসেরা একদিন বলাবলি করছিল খুব, দূর থেকে শোনা, যে, বৃষ্টি ও বিকেলে রক্তৈক্য আছে, সম-আধান, দু'জনে অতএব বিকর্ষণই সম্মত চুম্বকের ধর্মানুসারে-- বিকেল মামা, বৃষ্টি ভাগ্নি, কিন্তু আজ যা দেখছে গোধূলি, তাতে তার আরেকবার অন্তত ল্যাবরেটরি রুমে না ঢুকে উপায় নেই, গিয়ে দেখতে হবে যে আসলে ওদের সম্পর্কটা কীসের ভিত্তিতে রচিত, আকর্ষণের না বিকর্ষণের, আরেকটা কাজ বেড়ে গেল, একথা ভাবতে-ভাবতে দক্ষিণমুখো আটগজ হাঁটল গোধূলি, বৃষ্টি বাঁচিয়ে দাঁড়াল এসে অষ্টভুজাকৃতির বিশ্রামাগারে, ইচ্ছে করছিল না খেতে, তবু ওখানে থাকা ফেরিবাজ ছেলেটার থেকে দু'টাকার মটরদানা কিনে হাতে নিতে-নিতে আলগোছে তাকাল পেছনে, দেখল, নিরাপদ বটে ওদের থেকে স্থানটা, এখান থেকে কেবল বৃষ্টি ও বিকেলের কেশাগ্রভাগ দেখা যায়, ওরা লজ্জায় পড়বে না, গোধূলির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটাই এমন যে সে নিজে থেকে আপন অস্তিত্বটা বিজ্ঞাপিত করতে চায় না, অতএব লুকিয়ে-চরিয়ে হাঁটে, নীরব থাকে, যেজন্যে যাপিত জীবনে তাকে অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত থাকতে হয়েছে, মাঝে মাঝে এ বৈশিষ্ট্যটার জন্য তার নিজের প্রতি রাগ হলেও এ খাদ থেকে উদ্ধারের জন্য কখনো কোনো চেষ্টাই সে করে নি, তা হোক, এসব নিয়ে সে দুশ্চিন্তা করে না, এ বিশ্বাসটা তার পুরোমাত্রাই আছে যে, তার যা প্রাপ্তি তা তাকে ফিরিয়ে দিতেই হবে এবং অন্যেরা সেটা তাকে দেবে, কেননা পরধন-লোভ অনৈতিক, যে প্রকৃতি তাবৎ শিল্পের শিক্ষক, তার ভেতরে এমন অজাচারী কার্যকলাপ পাত্তা পেতে পারে না, গোধূলি অতঃপর হাঁটতে লাগল অস্তাচলের দিকে, এই ভেবে যে, যতক্ষণ অন্তত বিকেল না উঠছে গাছের গুঁড়িটা ছেড়ে, ততক্ষণ ওদিকটা অন্তত বেড়িয়ে আসা যায়, যেদিকে রাত্রিরা ঘরদোর করে থাকে-- ইত্যবসরে দু'টো ঘটনা ঘটল, আকস্মিক এবং কাকতালীয়, মুহূর্তে গোধূলি ভেবে উঠল যে এগুলো তার সাপোর্ট, প্রকৃতিতে কোনো অনিয়ম চলতে থাকলে জীবকুলে দুর্ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক, মুহুর্মুহু, একের পর এক

অষ্টম শ্রেণি ঘেঁষা কিশোর, স্কুলের ইউনিফর্ম পরা, সাইকেলে দীর্ঘ ঢালু খাড়ি পাড়ি দিতে গিয়ে, উলটে কৃতিত্ব দেখাল, এই অর্থে যে, সে ভবিষ্যতে ভালো জিমন্যাস্ট হবে, আরেকটি ঘটনা ঘটল বছর নয়ের অপুষ্টিগ্রস্ত বালকের ক্ষেত্রে, হাফপ্যান্টের সাথে ইন করে শার্ট পরেছে যে, এবং যার খালি পা কুষ্ঠের শাদা দাগে ভর্তি, তেলতেলে, আনমনে নদী দেখছিল সে, হঠাৎ কী জানি কী দেখে এত উল্লসিত হয়ে উঠল যে, হাস্যার্থে চিৎকার করে দু'হাত ইংরেজি ভি বর্ণাকৃতিতে ঊর্ধ্বোত্তোলিত করে ঘুরতে থাকল, এবং এভাবে বড়োজোর তিনটা পাক খেতেই, ধপাস করে পড়ল গিয়ে শহর থেকে নদীতে নেমে আসা বর্জ্যজলবাহী নালার মধ্যে, এ বিয়োগান্তক দৃশ্য দেখে জলতলে স্থূল নিতম্ব ভাসিয়ে দেয়া শুশুককুলের মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া হয়েছিল কিংবা আকাশপাড়ার চেনামুখ অতীব স্মার্ট ভুবনচিলরা শব্দ করে হেসেছিল কি না, তা কখনো জানা যায় নি

মটরদানাগুলো কী এক অদৃশ্য কারণে তিতকুটে লাগছিল তার, ঠিক সেদিনের মতো, গোধূলি ভাবে, ছেলেটাকে পেলে বলতে হবে যে মটরদানাগুলো সে যেন ফিরিয়ে নেয়, টাকাটা অবশ্য ফিরিয়ে চাবে না সে, এমন একটা প্রতিবাদ সে শিখেছে, যাতে হাতমুখ খারাপ না করেও ‘যারে-দেখতে-নারি’র চলনকে বাঁকা ঠাওরানো যায়, তা প্রায় তখন থেকে, প্রেম করতে শিখেছে যখন লালিমার সাথে-- পেছনে ফিরে সে দেখতে চায়, এ তল্লাটে ছেলেটা আছে কি না, কিন্তু চোখ দু’টো তার এ কাজে মনোযোগী হতে পারে না, দৃষ্টি ফেরায় নিয়ে গামারিতলায়, দেখে, ওরা দু'জন, বৃষ্টি ও বিকেল, এখন বেজায় বিব্রতকর অবস্থার ভেতরে নিপতিত, ব্যাপারটা এই এতদূর থেকেও বেশ বোঝা যাচ্ছে, বখাটেদের উৎপাত সাতবছর আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে দেখা যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হয়ত থেকে যাবে, যদিও সে চায় সব মানুষই একদিন অন্তত এ পর্যায়ে এসে দাঁড়াবে যে, অন্যের অধিকারের ব্যাপারটাকে তারা গুরুত্ব দেবে, বখাটেগুলো সেদিনের মতোই পেছন থেকে ওদের লক্ষ্ করে এটা-ওটা বলাবলি করছে, চিৎকার চ্যাঁচামেচি করছে, শিস দিচ্ছে, ঘটনার আকস্মিকতায় বিকেলের হাতে তার পরিচয়পত্র ঝলসে ওঠে, বাহ সে কি এখন উঠবে, অন্তত তার ওঠা উচিত, বৃষ্টিকে জাপটে ধরে এরপরও বসে থাকা ঠিক নয়, নইলে হীতে বিপরীত কিছু একটাও ঘটে যেতে পারে

নদীর ওপার থেকে যখন সর্বশেষ পাখির ঝাঁকটি উড়াল দেয়, ঠিক তখন ওঠে বিকেল, মেদবহুল মানুষের মতো ধীরেসুস্থে, এবং কী আশ্চর্য, হাত ধরাধরি করে বৃষ্টিও, গোধূলির মনে হয়, পৃথিবীতে তার জন্যে কোনো টেকসই ঠাঁইবাহুল্য নেই, লালিমা তাকে ছেড়ে গেছে সেই কবে, বৃষ্টি সে-ও গেল, ভাবতে-ভাবতে সে তাকিয়ে দেখে, ততক্ষণে রাত্রির ঘরের দরজা-জানালা খুলে যাচ্ছে পটাপট, এবং পৃথিবীময় জ্বলে উঠছে অজস্রাজস্র সান্ধ্য-আলোক

1 comment:

Anonymous said...

রে রে