অমিত দেখল যে তার দুটো পৈতৃক হাতের একটিও আর অবশিষ্ট নেই-- বিস্ময়ে-বিষাদে সে দৌড়ে ম্যানসাইজ আরশির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই লক্ষ করল যে হাত তো নেই-ই, এমনকি তার মুখটিরও প্রায় নেই-নেই অবস্থা-- কেমন যেন ঝাপসা, বিকৃত হয়ে যাওয়া, মেঘের আড়ালে অনুপ্রভা আলোভাণ্ডের প্রায় হারিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা যেন-- অতঃপর সে সঙ্গত কারণেই চিৎকার করল এবং ঢলে পড়ল আরশির সামনেই-- ঘুম থেকে জেগে দেখল যে, সে বিছানার পাশে মেঝেতে কুঁজো হয়ে শোয়া-- হাত না থাকার কথা মনে হতেই দ্রুত তাকাল ডানে বাঁয়ে-- না, হাত ঠিকই আছে, দুটোই-- তারপর উঠে প্রকৃতই দৌড়ে গেল আরশির সামনে-- না, মুখটিও আছে-- একটু যা ঘেমে নেয়ে যাওয়া, ক্লান্ত-- যাক, বাঁচা গেল-- ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল নটা পাঁচ-- অফিসে যাবার সময় ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ-- সাধারণত সে আরো আগেই জাগে, আজ কেন যে এত দেরিতে ঘুম ভাঙল তার-- অদ্ভুতুড়ে এই স্বপ্নটা বোধকরি এজন্যেই-- বস আজ নিশ্চয়ই ক্ষেপে যাবেন-- এটা মনে হতেই দ্রুতহাতে ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে গামছা কাঁধে ঢুকে গেল বাথরুমে-- কমোডে বসে আবারো মনে ভিড় করে এল স্বপ্নটির আদ্যোপান্ত-- ছি, কী বাজে ব্যাপার-- এমন স্বপ্নও মানুষ দেখে-- কোনো কার্যকারণ সূত্রই এর খুঁজে পায় না সে, ভুলেও যেতে পারে না-- ঠিক করে, এটা বরং একদিক থেকে ভালোই হলো যে বিদঘুটে এই স্বপ্নটা নিয়ে একটা দশাসই গল্প ফাঁদা যাবে এবং সেটা আজই
অমিত মানে অমিত কহ্লার-- গল্পকার, বাতাসের কাণ্ডকারখানা যাকে একদিন কিশোর বয়সে অলৌকিকভাবে লিখিয়ে নেয় বাতাসীর দুঃখবেদনা এবং যে পরবর্তী সতের দিনে আরো তিন তিনটি গল্পের খসড়ায় উত্তীর্ণ হয়ে যায়-- তার একসময় মনে হয় যে, চাইলে সে একজন গল্পস্রষ্টা হিসেবে আবির্ভূত হতেও পারে-- যেই ভাবা সেই কাজ, রাতারাতি পিতৃপ্রদত্ত ‘অমিত রহমান’ নাম বদলে সে ‘অমিত কহ্লার’ হয়ে যায় এবং একজন ব্যস্ত লেখকের মতো দিনপাত করতে থাকে
কহ্লার মানে জলকে হাদিত করে যা, উৎপল, শালুক-- যে দেশে পর্যাপ্ত জলমহাল, সে দেশের একজন গল্পকারের সার্থক নাম ‘কহ্লার’ হওয়া তার কাছে যৌক্তিকই মনে হয়, নামপ্রভাব যেহেতু মানুষের মধ্যে গোপনে হলেও কাজ করে-- সে অতএব ধরে নেয় যে তার আদিনামের ‘অমিত’, তাকে দিয়ে লিখিয়ে নেবে প্রচুর-- আর ‘কহ্লার’ হয়ত দু-তিনরকম মানে করবে অথবা ভূমিকা রাখবে পাঠকের মধ্যে-- কারো চিত্তসমুদ্র হ্লাদিত করবে, কাউকে বা সৌগন্ধিক শ্বেতোৎপল হয়ে বিমলানন্দ বিলাবে, কাউকে দেবে শালুক হয়ে জলোখাদ্যের নিশ্চয়তা-- এসব ভাবাভাবির চে’ বরং এখানে এ তথ্যটা দেয়াই জরুরি যে, এরপর থেকে অমিত কহ্লারের রাশি রাশি গল্পে ক্ষুধার মতো সত্য মানবিক-অভিপ্রায়ের পাশাপাশি কল্পরাজ্যের অতিমানবিক ফুলসমূহও ফুটতে থাকল যুগপৎ
একবার বন্ধুদের পরামর্শে বাছাই ছোটকাগজগুলোর কোনো-কোনোটিতে পাঠাল তার হ্লাদনমতাসম্পন্ন সৌন্দর্যময় খাদ্যগল্প-- ছাপা হয়ে গেল তার কোনো-কোনোটি-- নিন্দা যেমন জুটল তেমনি প্রশংসাও-- কিন্তু, অমিত কহ্লার আশ্চর্য হয়ে আবিষ্কার করল যে, তার পাঠকরা তার গল্পে হ্লাদনা, সৌগন্ধ, সৌন্দর্য বা খাদ্য কোনোটারই নিশ্চয়তা পাচ্ছে না-- ঘটছে বরং উলটোটা, যেখানে সে যাচ্ছেতাই ভাষায় গল্প ফেঁদে অভ্যস্ত, সেখানে সে পেল চিত্তাকর্ষক-ক্রিয়াভিত্তিক-বহুরৈখিক-ডায়নামিক এবং নতুনতর এক গদ্যভাষার আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি-- এই বা কম কী, ভাবল সে এবং কলম চালিয়ে গেল যথাতথা, ক্রমশ পরিস্থিতি কিছুটা বদলাল, জৈবনিক চাকার ঘূর্ণনে চাকুরি সুবাদে কলম ছেড়ে কম্পু-সভ্যতায় নিল নিবিড় হাতেখড়ি, আগে যেখানে সে নিয়মিত গল্পকার ছিল-- এখন হয়ে উঠল অতিনিয়মিত-- মাথায় পোকার মতো কিলবিল করতে থাকা গল্পবীজ থেকে উদ্ভিদও গজাতে থাকল প্রতিদিন, অফিস কম্পিউটারে-- অবসরে
হন্তদন্ত হয়ে স্বপ্নে হাতমুখহারা হবার দিন সামান্য দেরিতে অফিসে গিয়ে চেয়ার টেনে বসবার আগেই সে দেখল যে তার টেবিলের সামনে একটি স্টিকার ঝুলছে-- ‘এই কম্পিউটারটির মালিক অ্যাড লিঙ্ক, গল্পকার অমিত কহ্লার নয় : ম্যানেজিং ডিরেক্টর’-- সহকর্মীর চোখের দিকে তাকাতেই সে বলল, বস আজ সকালে এসেই আপনার কম্পিউটারটি অন করেন এবং ‘অউন’ ডিরেক্টরিতে থাকা রাশি রাশি ফাইল ভর্তি এত ব্যক্তিগত কাজ দেখে খুব খ্যাপে যান-- তারপর তিনি নিজের হাতেই ওই স্টিকারটি কম্পোজ করে প্রিন্ট নেন এবং আমাকে লাগিয়ে দিতে বলেন-- আপনি এলে তিনি কম্পিউটার ধরবার আগেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন
অমিত কহ্লার গতরাতের ‘হাত নেই-মুখ নেই’ নামধেয় স্বপ্নটির কার্যকারণ এবার উপলব্ধি করতে পারে-- স্বপ্নের এই আগাম সঙ্কেত তাকে ভাবিত করে-- এটাকে সত্যিই একটা মজার ব্যাপার বলে মনে হয় তার-- যদিও তার আশঙ্কা হতে থাকে যে অহৃদ-অভদ্র ও নিয়তচণ্ড বস তার ফাইলগুলো সব ডিলিট করে দিয়ে গেছেন কি না-- নইলে কম্পিউটার ধরবার আগেই বা তার সঙ্গে দেখা করতে বলবেন কেন-- শরীরটা রাগে-আতঙ্কে-ভয়ে কাঁপতে থাকে তার-- সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করতেও ইচ্ছে করে না যে ফাইলগুলো আছে কী নেই-- নীরবে কিছু সময় ভেবে নিয়ে ‘ঠিক আছে আমি বসের রুমে যাচ্ছি’-- বলে সে হাঁটা দেয়
ডিরেক্টরের রুমের দরজার পর্দাটা সরাতেই তিনি ব্যঙ্গের সুরে বলে ওঠেন--
: আসুন গল্পকার অমিত কহ্লার, আপনাকেই আশা করছি-- বলছিলাম যে, এ-যাবৎ অফিসের প্রিন্টারে, ব্যক্তিগত কাজে, ধরুন গল্প, চিঠি ইত্যাদি মিলিয়ে আপনি যত পৃষ্ঠা প্রিন্ট নিয়েছেন তার কোনো হিসেব আছে আপনার কাছে
: জ্বি না হিসেব নেই, তবে করা সম্ভব
: হ্যাঁ হিসেবটা একটু করুন, আর শুনুন, যত কর্মঘণ্টা আপনি এই গল্পগুলো লিখবার কাজে ব্যয় করেছেন-- তারও একটা হিসেব দরকার-- ব্যয়িত অফিস উপকরণ এবং অফিস সময়ের অর্থমূল্য যা হয়, সে পরিমাণ টাকা আপনার বেতন থেকে কেটে রাখা হবে-- আপনার নিজস্ব যে ডিরেক্টরিটি ছিল সমুদয় ফাইলসহ ওটি আমি ডিলিট করে দিয়েছি-- নতুন করে আর কোনো গল্প লিখবেন না অবশ্যই-- একদমে এতগুলো কথা বলে তিনি অমিতের মুখের দিকে তাকালেন
অমিত আঁতকে উঠলেও মুখাকৃতিতে তার ছাপ পড়তে না-দিয়ে হালকা স্বরে বলল
: স্যার আপনি যে বেশ ঠাট্টাও করতে জানেন, এটা আগে জানতাম না
: আমি মোটেই ঠাট্টা করছি না
: সরি স্যার, তাহলে কি আমি ধরে নেব যে আপনি সিরিয়াসলিই কথাগুলো বলছেন
: আমি সবসময়ই সিরিয়াস কথা বলি, এবারও তাই বলেছি। আবার বলি, আমি সব ডিলিট করে দিয়েছি
: এতটা না করলেও তো পারতেন
: কেন, আপনার তো আর বাসায় একটা কম্পিউটার নেই যে ব্যাক-আপ নিয়ে নেবেন, শেষপর্যন্ত হতো কী ওগুলোর আবারো একটি করে প্রিন্ট নিতেন আপনি, সংরক্ষণ করবেন বলে-- সে সুযোগটি আমি রাখি নি
: কিন্তু আমার এতবড়ো সর্বনাশটি আপনি সত্যি-সত্যিই করে ফেলেছেন এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না
: শুনুন, প্রতিষ্ঠানের যে সর্বনাশটি আপনি করতে লেগেছিলেন, তার জবাব সর্বনাশ করেই দেয়া দরকার ছিল-- গম্ভীরভাবে বললেন বস
: কিন্তু আপনার ক্ষতি তো আপনি পুষিয়ে নিতে পারছেন, আমার বেতন থেকে টাকা কেটে রেখে-- আমারটা আমি কীভাবে পোষাব
: আবার লিখে নেবেন
অনেকটা কঠিন হয়ে অমিত বলে--
: বললেই হলো আবার লিখে নেবেন, লেখাটা অত সোজা হলে তো আপনিও লিখতেন-- যাকগে, আমি টোটাল হিসেবটা আজই আপনাকে দিচ্ছি-- আমার বেতন থেকে আপনি তা কেটে রাখবেন-- কিন্তু সেক্ষেত্রে আমার গল্পগুলো অবশ্যই ফেরত দিতে হবে
: শাসাচ্ছেন
: যদি তা মনে করেন, তবে তাই, কারণ ওগুলোই আমার একমাত্র অর্জন, আর কিছুই তো সঞ্চয় করি নি জীবনে
: যদি ওগুলো আপনার একমাত্র সঞ্চয়ই হবে, তবে অন্যের গোলায় রাখতে গেলেন কেন-- আগে সিন্দুক বানিয়ে তারপর তো স্বর্ণালঙ্কার গড়বেন
: না, আগে অলঙ্কার তারপর সিন্দুক-- আমি এভাবেই ভাবতে অভ্যস্ত-- তা যাহোক, এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ-- আমি আমার গল্পগুলো ফেরত চাই
: সাট আপ
: ইউ সাট আপ, বলে, উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গেল অমিত
: গেট আউট, আর শুনুন, কাল থেকে আপনার আর না আসলেও চলবে
: কী করে ভাবেন যে, পাগলা কুকুরের গলা জাপটে ধরে চুমো খাবার শখ আমার এরপরও থেকে যাবে, বলে রুম থেকে হনহনিয়ে বের হয়ে আসে অমিত
অফিসে ঘটে যাওয়া এতবড়ো সর্বনাশটি অমিত কহ্লারকে প্রায় পাগল বানিয়ে ছাড়ল-- সারাজীবনের যা লেখা তার অর্ধেক এ-কাগজ সে-কাগজ থেকে সংস্থান করা যাবে হয়ত-- এরপরও কম করেও গত দু'বছরের আঠারটি অপ্রকাশিত গল্প জীবন থেকে একেবারেই হারিয়ে গেল-- এর এক-আধটি হয়ত কোনো-কোনো ছোটকাগজ ছাপবে, কিন্তু তার সংখ্যাও নেহায়েত পাঁচের অধিক নয়-- তেরটি গল্প লেখা কি সোজা কথা-- এ কষ্ট সওয়া যায় না-- বসটা একটা পাগলা কুত্তা-- প্রায়ই এসব ভাবে আর ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে ওঠে অমিত কহ্লার-- অথচ করার তার নেই কিছুই
অ্যাড লিঙ্ক থেকে আলাদা হবার পর থেকে মাথার ভিতরে অজস্র লেখার খসড়া তৈরি হয়ে মাথায়ই মিলিয়ে যেতে থাকল তার, কিন্তু গত দু'মাসে একটিও গল্প লেখা তার পক্ষে সম্ভব হলো না-- ইতঃপূর্বে গল্প পাঠাব বলে যেসব ছোটকাগজকে কথা দেয়া হয়েছে-- তাদের উপর্যুপরি চিঠি তাকে আরো বেদনার্ত করে তুলল-- কিন্তু তবু, কলম সহযোগে একটি গল্প কীভাবে লেখা যেতে পারে এটা এখন সে ভাবতেই পারে না-- এতবড়ো গাদা-গাদা উপন্যাস স্রেফ কলম কষে কীভাবে যে লিখেছেন আমাদের ঔপন্যাসিকগণ-- আরো কিছুদিন পর এসব নিয়ে বিস্ময়ের আর শেষ থাকবে না বলে মনে হয় তার-- জাদুঘরে রক্ষিত হাতে লেখা এসব উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি স্বচক্ষে প্রদর্শনের পরও অনেকে বিশ্বাস করতে চাবে না যে আসলেই সেসব হাতে ও কলমে লিখিত হয়েছিল-- মাত্র বছর দুয়েকের কম্পু-অভ্যস্ততা কলমের ব্যবহার তাকে প্রায় ভুলিয়েই দিয়েছে-- নিজের এত টাকা নেই যে, একটি কম্পিউটার কিনে নেয়া যায়-- তাছাড়া বন্ধুদের মালিকানায়ও নেই কোনো কম্পিউটার যে রাত জেগে তাদেরটা ব্যবহার করবে-- অমিতের মনে হতে থাকে যে সে আর কখনো লিখতেই পারবে না-- পাঠকরা তাকে ভুলে যাবে-- সম্পাদকরা তার লেখা চেয়ে আর চিঠি লিখবে না-- তার আশঙ্কা হয়, হাত না থাকায় দিনে-দিনে তার সেই স্বপ্নের মতো মুখটাও নাই হয়ে যাচ্ছে এখন
বিকল্প একটা জবও দরকার তার-- কিন্তু অ্যাড লিঙ্ক ছেড়ে দিয়েছে জানিয়ে বাবাকে একটি চিঠি লেখার পর বাবা যে সহৃদয় মতামত জানিয়েছেন, তাতে নতুন একটি কাজের জন্যে একেবারে হন্যে হয়ে পড়বার মতো কারণ তার ঘটে নি-- বাবার চিঠির মতে শেষপর্যন্ত চাকুরি না করে জেলা শহরের বাড়িতে ফিরে গেলেও বাবা তাকে সাদরে গ্রহণ করে নেবেন-- কাজেই কোনো অর্থগৃধ্নু বসের অধীনে কাজবাজ সে করবে না, এটা প্রায় সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছে-- কমবেশি খেয়ে-পরে বাঁচার উপায় তার এখনো আছে, কিন্তু গল্প লিখতে না পারলে যে তার খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটা একেবারেই অর্থহীন, এটা আর কাউকেই বোঝানো যাবে না-- বোঝানো যায় না
অভ্যাস যে বদলায় এটার একটা উদাহরণ আমি নিজেই, অমিত ভাবে-- একসময় তো আমি কলমেই লিখতাম-- এখন পারব না কেন-- আবারো পারতে হবে-- মুখ রাখতে চাইলে আমাকে পারতেই হবে-- এরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে সে হুড়মুড় করে বিছানায় এলানো অবস্থা থেকে উঠে টেবিলে বসে-- কাগজ কলম টেনে নেয় ও শুরু করে, কিন্তু পৃষ্ঠাতিরেক এগোবার পর যখন গল্পটি চরম উৎকর্ষের দিকে ধাবিতপ্রায়, তখন তার মনে হয়, আর বুঝি এগোনো সম্ভব নয়-- তাছাড়া শুধু কি একবার এগোনো-- তার খসড়াপ্রবণ রচনা কলমে অন্তত তিন তিনবার ফ্রেস করার দরকার হয়-- সেটা বেশ আয়াসসাধ্য-- নিরুদ্যম হয়ে কাগজ কলম ফেলে রেখে আবারো ফিরে যায় সে বিছানায় এবং কেঁদে ফেলে-- একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েও যায়
পরদিন সকালে ডাকে আসা নতুন চিঠিটি পড়া শেষ করে তার মনে হয়, যেকোনোভাবেই হোক তাকে আবার লিখতে হবে-- পত্রকার তার অপরিচিত একজন পাঠক, পাঠ-অভিব্যক্তি লিখতে গিয়ে তিনি এমন এক ভাষার আশ্রয় নিয়েছেন, যা একজন লেখকের অন্তর্দেশকে হ্লাদিত করবার ক্ষমতা রাখে, এতদিন সে অন্যদের হ্লাদন করেছে, আজ সে নিজেই হ্লাদিত-- তার মনে হতে থাকল, ভেতরে বুঝি একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে, যা প্রলয়ঙ্করী-- গলতে থাকল ইচ্ছা ও ক্ষমতার মধ্যকার বাধার বিন্ধ্যাচল-- ঢেউ উঠল মনে-- তক্ষুনি কাগজ কলম টেনে নিল সে এবং আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করল যে, বাক্যের পর বাক্য তার কলম থেকে নিঃসৃত হচ্ছে ঠিকই, তবে সৃষ্টিধারার গতিমুখ মোটেই একটি গল্প হয়ে ওঠার দিকে ধাবিত হচ্ছে না
No comments:
Post a Comment